Society, Language and Culture
সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি

(A Multidisciplinary Peer-Reviewed Journal)
A Unit of Society, Language and Culture Trust
ISSN: 2583-0341

শুভ্রালিপি, ২০২২

Short Stories/ছোটগল্প

গন্ধ

নন্দিতা আচার্য


স্যার, ভীষণ কাণ্ড হয়ে গেছে! 

সকাল থেকে এমনিতেই শুভ প্রচুর ঘেঁটে আছে। সময়টা মোটে ভাল যাচ্ছে না। লাস্ট দুমাস টার্গেট ফুলফিলও হয়নি। শালা, কেন যে মরতে ম্যানেজমেন্ট পড়তে এসেছিল! অঙ্কের তুখোড় স্টুডেন্ট শুভ পাশ করে কলেজ টলেজে পড়াবে, এমনই ভেবে রেখেছিল তার ছাপোষা বাবা-মা। কিন্তু দিয়া এসে সব গোলমাল করে দিল। তবু শেষ পর্যন্ত দিয়াকে পাওয়া হল না শুভর!    

 স্যার, কাল রাত্রে ফোন করে লাস্ট কথা হয়েছে সঞ্জয়ের সঙ্গে। তখনি খুব ডিপ্রেসড্ ছিল। প্রথম দিকে ছেলেটা এত ভাল কাজ করছিল! দিন কুড়ি ধরে ওর পরিবর্তন দেখছি। যেখানে আমাদের প্রোডাক্ট মান্থলি সোয়া দুই থেকে পৌনে আড়াই লাখ বিক্রি হচ্ছিল; সঞ্জয় আসার পর সেটা চার লাখ ছুঁয়ে ফেলল। কিন্তু এ মাসে তো কোনক্রমে এক লাখ পেরিয়েছে।   

কী বিপদ! এ রকম হলে সমস্যা শুধু  সঞ্জয়েরই নয়, মুশকিলে পড়বে শুভ নিজেও। সঞ্জয় হল  ডিএসার অর্থাৎ দোকানে দোকানে ঘুরে যারা প্রোডাক্ট বেচে। এরা খুব সাধারণ লেভেল থেকে আসে।  আট থেকে দশ হাজারের মধ্যে মাইনে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে। তবে কাজের ওপর এদের ইনসেন্টিভ থাকে। সেলস অফিসাররা এদের পরিচালনা করে। সেলস অফিসার এবং তার ওপরে অনেক গুলো ধাপ পেরিয়ে ম্যানেজার। অর্থাৎ শুভ। ইস্টার্ন জোনের অল ইন অল শুভ। খুব ট্যুরে থাকতে হয়। এ বেলা ফ্লাইটে মুম্বাই গিয়ে ও বেলা লেট নাইটে ফিরে আসা। কখনো দু’তিন দিনও বাইরে। তখন ফাইভ স্টার হোটেলের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে কাটতে দিয়ার সঙ্গে রোমান্সের কথা ভাবে। আর সন্ধ্যায়... টার্গেট ক্লিকের দোলাচল নিয়ে হোটেলের বারে বসে দামি স্কচ পান করে।     

  খারাপ লাগে না ট্যুরগুলো। বাড়ির ডিসিপ্লিন থেকে ছুটকারা। কম্পানি প্রচুর পয়সা খরচ করে ওদের পেছনে। কিন্তু কম্পানির আসল স্টেরন্থ যে ওই বাচ্চা গুলো, অর্থাৎ ডিএসার; এ কথা অন্যদের সঙ্গে শুভও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। ডিএসাররা যদি আচমকা ধর্মঘট ডেকে বসে, কম্পানির হাতে হ্যারিকেন। সঙ্গে শুভ এবং তার সাবরডিনেট স্টাফ, সকলেরই সেই দশা হবে। 

 অনুপম......আমাকে আপডেট দিতে থাকো। ওরিড আছি। কী বিপদ। সঞ্জয় যদি ভাল মন্দ কিছু ঘটিয়ে ফেলে...তার দায় এসে তো পড়বে সকলের ওপর। 

ইয়েস স্যার! আমারও খুব ভয় করছে।

টেনশনে সামনে কফির কাপে দ্রুত অনেকগুলো সিপ্ দিয়ে ফেলল শুভ। শালাকে যদি হাতের কাছে পেত না, ঠাসিয়ে এক চড় মারত!  উফহঃ, এদিকে বিকেলের মধ্যেই মুম্বাইতে টপ বস রোহিত কে একটা জরুরি রিপোর্ট পাঠাতে হবে। তারপর লেট নাইটে উড়ে যেতে হবে আমেদাবাদে। শুয়োরের বাচ্চা ট্র্যাভেল এজেন্টটাকেও চেঞ্জ করতে হবে। মাঝরাতে ফ্লাইটের টিকিট কাটবে কেন? বললেই হল, আগে পাওয়া যায়নি! তার মধ্যে এই কেস? কোনদিক সামলায় সে? এদিকে বাড়িতে ঝুমুরের সঙ্গেও ঝামেলা!                 

 বস...কিছু বলুন? গতকাল রাতের পর থেকে আর কিছুতেই পাচ্ছি না তাকে! ওর বাড়ি চলে   যাব? কিন্তু অন্যভাবে যদি ফেঁসে যাই? আর বাড়িতে গেলেই যে ওকে পাব; তারও তো কোন সিওরিটি নেই!     

কি বলি বল তো অনুপম? দেখ না, কোন ভাবে যদি কাছে ডেকে একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে ম্যানেজ করতে পারো?

কাকে স্যার?   

-‘আমার শাশুরিকে!’ কোনক্রমে রেস্টলেস রাগটাকে গিলে নিয়ে শান্ত স্বরে বলল, ‘আরে... সঞ্জয় কে!’ 

বাড়ির ঝামেলাটাও যদি না থাকতো শুভ ব্যাপারটা ঠিক ট্যাকেল করে নিতে পারতো। ঝুমুরকে নিয়েও আর পারা যায় না। চাকরি করে খেতে হয় না তো, তাই কিছু বোঝেও না! যত আজগুবি   বিষয় নিয়ে মেতে থাকে। তা থাক, শুভকে টানা কেন?  বিয়ের পর থেকে রিয়ান কে বড় করা  ছাড়া আর কি অবদান আছে ঝুমুরের?  তাও তো দু’বেলা দুটো আয়া ছিল। আর এমনি এমনি অফিস নিয়ে পড়ে থাকে নাকি শুভ? দামি বাড়ি গাড়ি ...কোথা থেকে আসে এসব? এখন ইস্যু হল, পারিজাত যেদিন মারা গেল, শুভ কেন সেদিন শোক না দেখিয়ে ডিনারে মাংস চেয়ে খেল? তারপর আবার হুইস্কি? 

পারিজাত হল কিম্ভুতে একটা কচ্ছপ, তাকে নিয়ে আদিখ্যাতার শেষ নেই। চুমু খাওয়া, বিছানায় নিয়ে শোয়া; এদিকে শুভকে ক’টা চুমু খেতে কৃপণতা! আর বিছানায় তো পুরো স্থির। হাজার টালবাহানা! আরে, সারা যৌবনকালই যদি সংযমে চলে গেল...তাহলে আর লাইফের কি থাকে?  

 স্যার... স্যার এই মাত্র কথা হয়েছে! কিন্তু তার আগে অন্তত দশবার ফোন করেছি... ধরেনি!   ব্যাপারটা খুব ঘেঁটে আছে মনে হয় বস্! সঞ্জয় যখন কথা বলছিল, পাশে ট্রেন যাওয়ার আওয়াজ পেয়েছি। বলল, রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে!  স্যার...ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছে। বলা যায়না, সত্যিই যদি কিছু ঘটিয়ে ফেলে!  

আচ্ছা অনুপম, ছেলেটা হঠাৎ এত ডেস্পারেট হয়ে উঠল কেন?                       

স্যার, ওর বিয়ের ফাইনাল কথা হয়ে গেছিল। কিন্তু তারপর মাইনে পত্রর কথা শুনে মেয়েপক্ষ    পিছিয়ে গেছে। তাতে ও খুব হার্ট হয়েছে। আর সে জন্যই নাকি ও এমন একটা ডিসিশন নেবার কথা ভেবেছে। 

বিয়ে ভাঙার জন্য এত ভেঙে পড়া? ও মাই গড! খোঁজ নাও এদিক ওদিক থেকে...ব্ল্যাক মেইল করছে না তো?                              

 হ্যাঁ...ইয়ে স্যার, আমাকে তো সে রকমই বলছে। খবর আশপাশ থেকে নিচ্ছি। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, সত্যিই যদি ও একটা কিছু করে বসে? সাংঘাতিক ফেঁসে যাব বস্!  

হুম...সে তো বটেই। ফোন না ধরলে তুমি ওকে মেসেজ কর। বল আমি কথা বলতে চাইছি। আমি ফোন করলে তো ও বুঝবে না; ওদের কাছে তো আমার নম্বর থাকেনা? তুমি নম্বরটা ওকে পাঠিয়ে   দিয়ে বল, ইমিডিয়েট আমায় ফোন করতে। আমি ওয়েট করছি...এটাও বোল।  

ওকে স্যার!  

শুধু কচ্ছপ নয়, রাস্তার দুনিয়ার কুকুর, কাক-পক্ষী, বেড়াল.....কিছু বাদ নেই ঝুমুরের লিস্টে। যাদের ছেলেপিলে না থাকে, অথবা অনেক বড় হয়ে গেছে, জীবনে নিঃসঙ্গতা; সে রকম মানুষজন এরকম পাগলামো করে। রিয়ানটা সবে আট পেরিয়েছে। এখন তো তাকে নিয়েই আহ্লাদ করার সময়। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ওদের সারভেন্টস কোয়াটার, বলতে গেলে এ সব পোষ্যদেরই দখলে। এ নিয়ে আবাসনের কতজনের কাছে যে, কত কথা শুনতে হয়! ঝুমুরের কিছুতেই কিছু এসে যায় না। এসব     নিয়ে সে ভেরি কুল! ওই মিষ্টি চেহারার আড়ালে যে এমন ‘জন্তু প্রেম’ লুকিয়ে আছে, ঘুণাক্ষরেও   যদি আগে বুঝত; কিছুতেই শুভ ওকে বিয়ে করত না! মনে হয়, দেয় ডিভোর্সের মামলা ফাইল করে; হাড় জ্বালিয়ে খেল! শুধু ছেলেটার কথা ভেবে থেমে থাকা। কোনদিন না এই মেয়ে একটা আস্ত সাপ নিয়ে এসেই পুষতে বসে যায়! হরেবল্! 

হ্যালো অনুপম, ওদিকের খবর কি? সে তো ফোন করল না এখনও! 

ফোন করেনি স্যার, আপনাকে? আমি তো অনেক বোঝালাম! নম্বর তো আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি।    একটা ইমপ্রুভমেন্ট, লাস্ট বার একবারেই ফোন ধরল।  

গুড! 

কিন্তু বস, মালটা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে কে জানে! অনবরত ট্রেন যাওয়া আসার তীব্র আওয়াজ!  মনে হয় কোন জংশন স্টেশন... 

আচ্ছা ঠিক আছে, দেখছি কি করা যায়।

সরি বস, 

বেখেয়ালে মুখ খারাপ করে ফেললাম। আসলে এত চাপ আমিও আর নিতে পারছি না; মাথার ঠিক নেই।                                                    

ওকে, কুল... আমি নিজে দেখছি এবার কেসটা।                                 

সঞ্জয়ের মত ছেলেরা...হতে পারে ডিএসআর, দোকানে দোকানে ঘুরে প্রোডাক্ট পৌঁছে দেয়; কিন্তু ফট   করে যদি কিছু একটা করে বসে- ওপর মহল অব্দি টনক্ নড়ে যাবে। তারপর হারামজাদা মিডিয়া গুলো তো ওঁত পেতেই আছে। একটু এদিক ওদিক হলে কম্পানির বদ নাম করে ছাড়বে। এরপর   যদি সব ডিএসাররা মিলে জোট বাঁধে, তাহলে তো কেস পুরো জন্ডিস! নাহ, এবার ইগো ত্যাগ করে শুভকেই মাঠে নামতে হবে।

চেয়ার ছেড়ে কেবিনের বাইরে এল সে। সিঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে চোখে একটু জল দিল। যাহ্‌, নিজের চেম্বারের সঙ্গেই তো ওয়াশ রুম ছিল। বাইরে এসে জল দেবার কি হল? শুভ তাহলে সত্যিই নার্ভাস হয়ে গেছে! আজকাল কত কি-ই যে ঘটছে? ফেসবুকে অন লাইন হয়ে ডাইরেক্ট সুইসাইড!  টঙে দাঁড়িয়ে, সকলকে জানিয়ে শুনিয়ে ঝাঁপ! চিন্তা করাটা কি শুভর দোষ?   

খবরটা এখনও অনুপম এবং শুভ ছাড়া, আশা করা যায় আর কেউ জানে না। ওর পিওন শঙ্কর   দৌড়ে এল... ‘স্যার, শরীর খারাপ হল না কি? আপনি বাইরে বেরিয়ে এসে মুখে চোখে জল ছেটাচ্ছেন?’ 

‘নাহ, ঠিক আছে; এক কাপ স্ট্রং কফি পাঠিয়ে দাও তো।’ শুভ ফোনে হাত দেয়। সঞ্জয়কে ডায়াল করতে হবে। তার আগে ঝুমুরকে একটা মেসেজ পাঠাতে হবে। ঝপাঝপ টাইপ করা শুরু করল। -সুইট হার্ট, প্লিজ ফরগিভ মি! পারিজাতের মৃত্যুদিনে খাওয়া দাওয়াটা আমার ভুল করে হয়ে গেছে   গো! আসলে সারাদিন কাজের চাপে খাবার সুযোগ পাইনি। সত্যি বলছি, আমি হার্টলেস নই। পারিজাত কে আমিও বেশ ভালবাসতাম। ডার্লিং লাভ ইউ, অ্যান্ড অ্যাগেইন আই আস্ক ফর অ্যান অ্যাপোলজি! 

এবার সঞ্জয়। টানা রিং হয়ে কেটে যাবার মুহূর্তে ওপাশ থেকে কাঁপা গলায় ‘হ্যালো’ শোনা গেল। 

সঞ্জয়, আমি ডিজিএম বলছি। শিগগিরি অফিসে এসো, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। 

স্যার, আমার কারুর থেকে কিছু আর চাওয়ার নেই, আমি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। সারাদিন   পরিশ্রম করে যে টাকা পাই, গরীবের সংসারে তা ভালই। কিন্তু বিয়ে করলে, বউ বাচ্চা নিয়ে সবদিক সামাল দেওয়া খুবই দুষ্কর। টাকা নেই বলেই আমার গার্ল ফ্রেন্ড আমাকে ছেড়ে গেছে। আমি খুব হার্ট হয়েছি, অপমানিত হয়েছি। তাই অনুপম স্যারকে জানিয়েছি, আমি আর বাঁচতে চাই না।

তুমি কি চাও? রোজগার একটু বাড়ুক? যাতে সবকিছু সামলাতে পারো; তাই তো? ওই রেল স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো তা হবে না! তুমি আমার কাছে এস। দেখছি, কি করা যায়।   

কী হল, আসছ তো? 

 আপনি আমায় কোনদিন ফোন করবেন, ভাবতেও পারিনি! থাঙ্ক ইউ স্যার। আসছি আমি...

ঠিক আছে, ‘থাঙ্কস’ পড়ে হবে। তাড়াতাড়ি এস। একটু বাদেই আমি বেরিয়ে যাব।

শুভ মুম্বাইতে তার বস রোহিতকে পুরো বিষয়টা জানায়। মাসে দু’আড়াই হাজার টাকা বাড়ানো মানে বছরে কম্পানির পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা খরচ বেড়ে যাওয়া। নাহ, তেমন কিছু লস হবে না। রোহিতও বিষয়টা এগ্রি করল।

শঙ্কর এসে জানালো, সঞ্জয় বলে একজন দেখা করতে এসেছে। 

খুব ইতস্তত ভঙ্গিতে সামনে এসে দাঁড়ালো যে ছেলেটা, মেরে কেটে তার তেইশ চব্বিশ বছর বয়স হবে। একটা নিষ্পাপ শ্রী আছে মুখের ভেতর। এর জন্যই উত্তর চব্বিশ পরগণায়, সেল লিমিট ইনক্রিস করেছিল। অগোছালো চুল, কুঁচকে যাওয়া জামা কাপড়। শুকনো মুখ। কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে শুভ গম্ভির ভাবে বলল, বোস। 

শঙ্করকে চা আর টোস্ট দিতে বলল। ছেলেটা আরও কুঁকড়ে যায়- ‘না স্যার।’ 

টং করে শুভর মোবাইলে মেসেজ এল। -ঝুমুর! লাভ সাইন পাঠিয়েছে। আহ, একজায়গায় অন্তত আপাতত রিলিফ! 

ছেলেটা মুখ নিচু করে কেমন গোগ্রাসে খাচ্ছে। শুভর অদ্ভুত মায়া হয়। হালকা যে সুগন্ধটা নাকে ভেসে আসছিল, সেটা অ্যাভয়েড করে সে বলে, তোমার স্যালারি কিছুটা বাড়ানো হল। কিন্তু আর কোন এদিক ওদিক চলবে না। জান প্রাণ লাগিয়ে এবার কাজে নেমে পড়। টার্গেট চার থেকে পাঁচ লাখে নিয়ে যেতে হবে। ইনসেন্টিভও বাড়বে তখন। তুমি পারবে, আমি বিশ্বাস করছি তোমায়! গার্ল ফ্রেন্ডকে জানিয়ে দাও। সে ঠিক ফিরে আসবে। পারলে, তার চলে যাওয়াটা ভুলে যেও। ঠিক মত কাজ করে যেতে পারলে, একদিন তুমিও হয়ত অনুপমের জায়গায় চলে যাবে, অথবা তারও কিছু ওপরে! 

ছেলেটার চোখের কোণায় জল। মুখ নিচু করেই সে উঠে দাঁড়ায়। 

‘এস এবার, আমাকে এখন অনেক পেন্ডিং কাজ সারতে হবে। অল দ্য বেষ্ট!’ দ্রুত তার পার্সোনাল সেক্রেটারিকে ইন্টার কামে কল করে শুভ।

কাজ সারতে সারতে সন্ধ্যা নেমে গেল। বাড়ি গিয়েই এয়ার পোর্টে ছুটতে হবে। যাক, ঝুমুরের মুড ঠিক আছে। আচ্ছা, সঞ্জয়ের গায়ে গন্ধটা কি সত্যিই শুভ পেয়েছিল? 

সেন্ট মেখে...... সেন্ট?  আসলে যে লেবেলের গন্ধ, তাকে পারফিউম নয়, সেন্ট বলাই ঠিক; আত্মহত্যা করার আগে কি কেউ গায়ে সেন্ট দিতে পারে? কে জানে! থাক, অত জানার দরকার নেই। মন অসম্ভব ফুরফুরে লাগছে। ট্র্যাভেল এজেন্টকে বলেছে, এবার সাত তারা হোটেলে ঘর বুক করতে। শুধু সুইমিং পুল নয়, ভাল স্পাও থাকতে হবে। জানা গেছে, তেমনই একটা হোটেল ঠিক হয়েছে। ওয়াও...               

অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠে শুভ। দারুণ সুদিং ওয়েদার তো? ড্রাইভারকে বলল, এসি   চালানোর দরকার নেই, একটু বাইরের হাওয়া খাই।

  হু হু করে বাইরের নরম ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকতে থাকে গাড়ির জানলা দিয়ে। আশ্চর্য, বাতাসের মধ্যেও হালকা ভাবে কোথায় যেন ভাসছে সেই গন্ধটা... ছোটবেলায় মায়ের ড্রেসিং টেবিলে থাকা যে জিনিসটাকে সে বলতো সেন্ট; যে স্মেল্টা কয়েক ঘণ্টা আগেই সে সঞ্জয়ের গায়ে পেয়েছিল!