সৃজন-স্পর্শ, ২০২২
Poems/কবিতা
মৃত্যুর সামনে কয়েক পংক্তি
নীলোৎপল গুপ্ত
হাসপাতালের অসহ্য গন্ধের মধ্যে সন্ধে হল।
মৃত্যুশোক বিষয়ে আমরা এখনও একটি বাক্যও উচ্চারণ করিনি। আমরা বলিনি কেমন করে যুবকের মৃতদেহ কাঁধে যুবকেরা হেঁটে গিয়েছিল। আলো-অন্ধকারের মধ্যে কেউ কেউ খুঁজেছিল নিজস্ব চিতা। তখন ঝিঁঝিঁর ডাকও যেন মন্ত্রধ্বনির মতো একঘেয়ে। তবু এরই মাঝখানে সন্ধে নেমে এল যথার্থ নিয়মে আর আমরা দর্পণের ছায়ার ভিতর খুঁজে চললাম একে অন্যের মুখ। কিন্তু কেউ কাউকে চিনতেই পারলাম না। শুধু ছায়ার ভিতরে ছায়া বিদ্রুপে ভেঙে গেল খান্ খান্।
আমাদের যাবতীয় কঙ্কাল -- কুশপুত্তলিকা আমরা কি তবে এই সন্ধের বাঁকে রেখে যাবো, প্রতিটি শমিবৃক্ষের সযত্ন কোটরে ? গল্পটা এতটা পথ অতিক্রম করে আসা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু মৃত্যুর দিকে একটি লঘুশব্দও নিক্ষেপ করিনি। বরংচ তাদেরকে হাত ধরে অন্য একটা রাস্তা চিনিয়েছি যেখানে প্রতিটি গন্তব্যের শেষে ধান -ছড়ানো উঠোন, প্রতিটি দৃষ্টির সামনে অযাচিত কুর্চিফুল, পথক্লান্ত মৃত্যুর সামনেও মেজোবউ ঘটিভর্তি জল রেখে যায়।
তক্ষুণি হয়তো পুকুরঘাটের দিক থেকে আচমকা গান গেয়ে ওঠে কেউ, যুবতীবেলার গল্প বলে চারকুড়ি পেরিয়ে-যাওয়া বুড়ি। আর এইসব দেখে করমচা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে ফূর্তিতে উড়ে যায় তিনটে শালিক।