Society, Language and Culture
সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি

(A Multidisciplinary Peer-Reviewed Journal)
A Unit of Society, Language and Culture Trust
ISSN: 2583-0341

দ্বিতীয় বর্ষ

Poems/কবিতা

উৎপাদনের দর্শন

আবীর চট্টোপাধ্যায়


পৃথিবীটা আজও দাঁড়িয়ে উৎপাদনের দর্শনে

সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকে

জঙ্গল থেকে রাজা হয়ে এখন বিশ্বায়নে

উৎপাদন আর ভোগের আপন সম্পর্কে।

 

রাজতন্ত্রের সহস্র যুগ কেটেছে উৎপাদনে

ক্ষমতা থেকে ধনসম্পদ আর সাম্রাজ্য

কৃষি থেকে হাতের কাজ পরের সারিতে

বিজ্ঞান আর চিকিৎসাশাস্ত্র ক্ষমতারই অনুজ। 

 

ধনবাদের সূচনা সেই বুদ্ধির এক বিভাস

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাম্রাজ্য আর উৎপাদন

চার মূল্য গড়ে তুলল আধুনিকতার মূষল

বাকি বিশ্বে উপনিবেশ আর ধর্ম সংস্করণ।

 

উৎপাদনই রক্ষক আর দখলের চাবিকাঠি

উৎপাদক ধনবাদী আর শ্রম গরীবের দ্বন্দ্ব

ধনীই যত অধিকারী বাকিদের শুধুই শ্রম

উৎপাদনই উন্নয়ন তাই গরীবের পথ বন্ধ।

 

উৎপাদন তাই সৃষ্টি করে চিরকালীন দ্বন্দ্ব

প্রতিষ্ঠা হয়নি ব্যাপকতর শ্রমের অধিকার

জাতপাত নারী আর নিম্নবর্গ ভিটেহারা

উচ্চশ্রেণি উচ্চবর্ণেই ক্ষমতার সমাহার।

 

দ্বন্দ্ব অবসানে যদি বিপ্লব হয় সমাধান

উচ্চবর্ণ, সৎপাত্র থেকে বাঁচবে কীভাবে

সর্বহারা হয়েও তেমন মুক্তি কিছু নেই

ভিক্ষা বরাদ্দ করেও পায়ের তলায় রাখবে।

 

এত জটিল অংক ছিল না একচেটিয়া পুঁজিবাদে

রাজা-রানী আর তাদের পছন্দের গণতন্ত্রে

উপনিবেশের অন্দরে বরং ছিল জটিলতা

নবজাগরণেও শ্বাস উঠল জনজীবনের মন্ত্রে।

 

সভ্যতার নবজাগরণ আর তারই গড়া দন্দ্ব

জন্মটা সেই একচেটিয়া উৎপাদনের দর্শনে

বুদ্ধির বিভাস এইভাবে বিভক্ত হয়ে গেল

খানিক রইল নবজাগরণে বাকিটা শুধু দ্বন্দ্বে।

 

বিকাশ চাই উৎপাদনের আছে যত সুফল

রেললাইন থেকে নতুন যত ধনবাদের ভোগ

দ্বন্দ্বে চাই উৎপাদন’এর ব্যবস্থাটার দখল

দ্বন্দ্বেই ঘটে মেধা আর প্রতিষ্ঠার সম্ভোগ।

 

দ্বন্দ্বটা তো চিরকালীন এমনকি সমাজবাদেও

দখল যদি করতে হয় ব্যবস্থা উৎপাদনের

দখল করবে সেটা দ্বন্দ্বের কোন মেরুটা?

দ্বন্দ্বের যুদ্ধও চলতে থাকে তাই চিরকালের।

 

নবজাগরণ ঘটাবে দন্দ্বের এক মেরু

বিপরীত মেরুতে শ্রম করবে মূল লড়াই

শ্রম থাকবে চিরকাল উৎপাদনের সঙ্গে

বিপরীত মেরু আসলে থাকল সেই ফাঁকাই।

 

এবার কাজ করবে শুধু ধনবাদের শোষণ

শ্রম থেকে ছিটকে দিয়ে করবে সর্বহারা

তা না হলেও শোষণে হবে শ্রমিক উত্তেজিত

বাঁধবে লড়াই তবেই যদি বাধা দেয় মালিকরা।

 

বলা আছে যা ধনবাদের উৎপাদনের দর্শনে

বানাও, বেচো, আর মুনাফা করো সর্বোচ্চ

তার জন্য যত পারো শ্রম কাজে লাগাও

কম পয়সায় খাটিয়ে বেশি শোষণ যথেচ্ছ।

 

যেটা এবার দাঁড়াল তাই সবদিক দেখে শুনে

উৎপাদন আর শোষণ কেমন একই সুরে বাঁধা

অনিবার্য শ্রমের বিরোধ দ্বন্দ্বেরই নিয়মে

অবসানের গান তাই কীকরে হবে সাধা?

 

বিচ্ছিন্ন হয় না শ্রম উৎপাদনের চাতুরিতে

যতই বাড়ুক শোষণ আর শাসনের যন্ত্র

বিরোধ যা কিছু সবই তো বোঝা গেল

কেমন করে সাধা হবে বিপ্লবেরই মন্ত্র?

 

উৎপাদনের দর্শনটাই প্রতিষ্ঠিত হলো

ধনবাদ থেকে প্রগতিবাদ সব ব্যবস্থার অন্দরে

মহাযুদ্ধের পরেও আবার উন্নয়ন পর্বে

উৎপাদনের দর্শনটাই গাওয়া হলো মন্তরে।

 

এই সময়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই শক্তিধর

দুই আদর্শ, দুই দেশ, একই আধুনিকতা

সেই প্রযুক্তি, প্রতিষ্ঠান আর প্রবল উৎপাদন

লড়াই এবার মহাকাশে, নীচে ঠান্ডা শত্রুতা।

 

সেই উৎপাদনও সইল না তিন দশকের মধ্যে

শিল্পোন্নত বিশ্বের শ্বাস উঠেছে ততদিনে

উৎপাদনে তৃতীয় বিশ্ব সবে শিশু তখন

নতুন কিছু শিল্প দিয়ে হাঁটা শুরু উৎপাদনে।

 

সমাজবাদী শক্তিধরেরও অবস্থা তথৈবচ

আদর্শ আর প্রতিষ্ঠান অবক্ষয়ে আক্রান্ত

নজরদারি আর হুমকিই তখন একমাত্র অস্ত্র

জনক্ষোভ আর তার উপর ডলারের চক্রান্ত।

 

উৎপাদনের যে দর্শন ইউরোপীয় ধনবাদের

চলবে কি সেই পথ দরিদ্র কোনো দেশে?

উৎপাদন একইরকম, সমস্যা আধুনিকতার

দম্ভ আর ক্ষমতাটাই গেড়ে বসল এদেশে।

 

অথচ তখন বাজার চাই শিল্পোন্নত বিশ্বের

যেভাবে হোক নতুন বাজার খোলো অন্য দেশে

সাহায্য করো শিল্পক্ষেত্রে বাড়াও উৎপাদন

বাকিটা সারবে বিশ্ব মিডিয়া উন্নয়নের বেশে।

 

যে উৎপাদন এত প্রয়োজন সবকটি দেশে

তৃতীয় বিশ্বে সেটাই হলো শর্তসাপেক্ষে

শিল্প থেকে মিডিয়া, যা যা চাই হাতে

উন্নয়ন গেল না তবু জনগণের পক্ষে।

 

নতুন বাজারের লোভ বদলে দিল দর্শন

উৎপাদন থেকে পণ্যভোগ হলো নতুন পথ

উপনিবেশের দেখা দিল নতুন এক চেহারা

পণ্যভোগ’এর মাত্রা এবার টানল সমাজ রথ।

 

মিডিয়াও সেই পথে নতুনরকম হলো

একমুখী টেলিভিশন থেকে হলো বহুমুখী

মিডিয়া বদলে গিয়ে এল পরিসর মাধ্যম

পরিসরে যে যার মতো ব্যক্তি অভিমুখী।

 

এইভাবেই থেকে গেল উৎপাদনের দর্শন

শোষণ আর মুনাফা হলো আকাশ ছোঁয়া

বিরুদ্ধ মত থাকলেও থাকল না বিকল্প

ভালো থাকার উদারবাদ ভোগের পথ চাওয়া।

 

জানুয়ারী, ২০১৬।