দ্বিতীয় বর্ষ
Poems/কবিতা
খোঁজ
সুদীপ ভট্টাচার্য
আরো একটি রুম ।
আরো একটি সিঙ্গেল রুমের দরজা খুললো এইমাত্র ।
চাবিটা খুঁজতে বড্ড হয়রানি।
একটা কাজ সারতে হবে এক্ষুনি ।
কারন সকালে ঘুম ভেঙ্গেই ঘড়ির কাঁটাটি যেন কার্ল লুইস্ ....
পঁচিশ পাওয়ারের লাইটটা জ্বললো অবশেষে ।
একটি হোয়াইটওয়াশ রুম, আক্ষরিক অর্থেই।
একটি সিঙ্গেল খাট আর তেষ্টা পেলেই পাশে প্লাস্টিকের জগ।
জলের গন্ধটা রতনের বড্ড চেনা।
হবেই না কেন? নদীতো কখনো নিজেকে ভাঙতে শেখেনি।
র্যাকভর্তি অফিসের ফাইল, ক্যরিয়ার গড়ার বই, আর বংশ লতিকা । তার লিগেসি ডাটা।
রতনের নামে কোর্ট থেকে দু-দুবার নোটিশ ....
তাকে তার দেশ প্রমাণ করতে হবে।
তবে এবারে সে সবকিছু ম্যানেজ করে রেখেছে।
দক্ষিণ দিকে একটি মাত্র জানালা ।
যেটি দিয়ে রতনের গতজন্মের বাতাস চলে আসে মাঝে মধ্যে।
আপাততঃ সেটি বন্ধ ।
ক্যারিয়ার গড়তে গেলে এসব বাতাসকে কিছুটা উপেক্ষা করতে হয়।
একজোড়া টেবিল -চেয়ার। টেবিলের এককোনে একটি পুরানো আর্টপেপার।
একটি নদীর ছবি সেখানে । কাঁটাতার ঘেরা। অন্যপারে শস্যশামলা প্রশান্ত তেপান্তর।
একটি আগুন ধরানোর স্টোভ।
‘আগুন’ শব্দটি রতনের কাছে এখন একটি শীতলতম শব্দ ।
সেই শেষবার উনিশো একশট্টিতে আগুন জ্বলেছিলো।
একটি আয়না , যেটিতে প্রায়শই প্রতিচ্ছবি বদলায়।
হ্যাঙ্গারে ঝোলানো কয়েকটি শার্ট , হালফ্যাশানের ।
পুরানো শার্টগুলি অনেককাল আগেই বাতিল।
সেগুলোতে তার স্বদেশের গন্ধ লেগে আছে।
ওগুলো গায়ে দিয়ে প্রমোটার হওয়া যায় না।
একটা কাজ সারতে হবে এক্ষুনি....
রতন গা থেকে ময়লা পাঞ্জাবিটা খুললো।
সঙ্গের পাজামাটি অনেক আগেই ছিঁড়ে ছেড়ে গেছে তাকে।
ওটিতে কোনো পকেট ছিল না।
এখন তার পরনে একটি জিন্স, চার পকেটওয়ালা।
এই পকেটগুলোকে রতনের সিঁড়ি বলে মনে হয়।
পাঞ্জাবি আর ডিটারজেন্ট নিয়ে রতন ওয়াশরুমে।
একটা কাজ সারতে হবে এক্ষুনি....
আজ তার জন্মতারিখ।
আর এইদিনে প্রতিবার নীলরং দিয়ে পাঞ্জাবিটা ধোওয়া চাই।
কিন্তু...কিন্তু... কোথায় সেই নীলরং?
কিছুতেই সে খুঁজে পাচ্ছে না তার নীলের প্যাকেটটাকে।
তার শেকড়ের গন্ধ ।
উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সেই নীলরং ।
তার ছোট্টবেলাকার বাঁশী। তার পৃথিবী।
স্বজনদের হাতের পরশ। এক আকাশ জন্মভূমি ।
তার অবিভক্ত স্বদেশ।
তবে কি রতনের জীবনে আর কখনো ফিরে আসবে না নীলিমা ?
তার অসম্ভব প্রিয় নীলরং। ভালোবাসার রূপকথা।
তার নিজস্ব বেদনাবোধ।
পাগলের মতো খুঁজে রেড়াচ্ছে সে....
যাকে জড়িয়ে ধরে সে চিৎকার করে বলতে পারবে --
'রাষ্ট্রহীন ঘোষিত হবার আগে আমি একবার অন্ততঃ আত্মপরিচয়ে ফিরে যেতে চাই।'