Society, Language and Culture
সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি

(A Multidisciplinary Peer-Reviewed Journal)
A Unit of Society, Language and Culture Trust
ISSN: 2583-0341

দ্বিতীয় বর্ষ

Poems/কবিতা

কবিতা-গুচ্ছ

অশোক মুখোপাধ্যায়


ক্রৌঞ্চ মরণ

তুমি কি ছেড়ে যাবে আমাকে?

ফেলে দিয়ে যাবে

যেমন ফেলে পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট?

তুমি কি পুত্র জন্ম দেবে বলে

নপংসুক এই অধমকে

করবে শাপান্ত?

তুমি কি কূলটা হবে?

নাকি কূলেরই জন্যে

শতশৃঙ্গ-নির্জনে

কান পাতবে পতিব্রতা?

শুধুমাত্র আমার সানুবন্ধ আদেশে

লিপ্ত হবে অমিত্রাক্ষর ছন্দে?

ধর্মের সঙ্গে নেবে শয্যা?

বায়ুর সঙ্গে নেবে ভূমি?

পুরন্দরের

সঙ্গে হবে মাহেন্দ্র-সঙ্গম?

অশ্বিনীকুমারেরা এসে দাঁড়াবে তোমার খুব কাছে,

ক্লান্ত তুমি এগিয়ে দেবে তোমারই সতীনকে

হৈমবতী তুমি গর্ভবতী হবে

হেমাঙ্গী রূপ হবে হ্লাদিনী আমার

জন্ম দেবে অজাতশত্রু,

বৃকোদর মধ্যমপাণ্ডব,

চরাচর রণিত করে আবির্ভূত হবে রক্তবর্ণ সব্যসাচী

সতীনের গর্ভাধারে পাবে অধিবৃত্তি

ক্ষিপ্রগতি মাদ্রেয় নকুল,

সর্বজ্ঞ অকনিষ্ঠ সহদেব,

আমারি স্বপ্ন হয়ে শ্রুতকীর্তি হবে পৃথা

ফেলে যাবে মাটির নৃপতিকে

মাটিতে হেলায়

শেষ দেখা হবেনা তো আর;

যেমন ফেলেছিলে বসুসেনা,

অনৃতভাষিণী অনূঢ়া,

সে কি রাধেয়, সে কি কৌন্তেয়

সে কি সূতপুত্র, অধিরথী?

নাকি জন্মাবধি জন্মবিচ্ছিন্ন,

অপাবৃত হবে সেই সত্য,

সেই মিথুন-লগণ;

তুমি চলে যাবে রাজ্ঞী

তোমাকে ঘিরে থাকবে আমাদের সন্তানেরা

আর এই নৈমিষারণ্যে

একাকীত্বের অগম্য গহীনে

আত্মহন্তা হব আমি

সাথে নিয়ে যাব কণ্যান অধিনী

বুকের উপরে জড়িয়ে থাকবে

কামোপহতা, চির জাগরূক মধুদূতী

পদ্মযোনিতনয়া বিরহী,

পৃথিবীর সেই হবে শেষ

ক্রৌঞ্চ মরণ

*************

অগ্নিজিতা

ঝড় উঠবে বলে

মাটির গভীরে

নিরাপদ আশ্রয়

খুঁজেছি আমি

বৃষ্টি হবে বলে

মেঘের ওপর দিয়ে

উড়ে গেছি আমি

তোমাকে দেখাব বলে

পদ্মরাগমণি,

কালো হীরে, হরিত মরকত

আগুনে পুড়েছি আমি

ডেঁড়েমুষে খেয়েছি নোনাজল

ডুবো-পাহাড়ে চড়ে

হাত পা শরীর ভাসিয়ে

করেছি অযাচ্য ভিক্ষা

সমুদ্রমেখলা তুমি

বলেছি আমি আছি

দাঁত দিয়ে কেটেছি

লোহা তার

জিভ দিয়ে ঠেলেছি

লোল জিভ

সর্বাঙ্গে মেখেছি

কালো ছাই

তোমাকে বেসেছি ভালো

সেই ক্ষোভে

ভেঙ্গেছি বেড়াজাল

অবাঙমুখে

শুনেছ সেই কথা

ঋতুমতি

অবশী ঊষা তুমি

রমণ-কাতর

তোমার বৈধব্যকে

দেরাজে তুলেছি

শূন্যহাত ভরেছি ঝিনুকে ঝিনুকে

অগ্নিজিতা

অগ্নিহোত্রী আমি

**********

চন্দন

শুধু হৃদয় কাঁদবে বলে

এমন করে রাত জেগে বসে থাকি-

সূর্যেন্দুসঙ্গমে

যেমন দুজনে মুখোমুখি বসে থাকে

চন্দ্রকলার অমানিশিতে,

ঠিক তেমন করে বসে বসে

অন্ধকারের সুধা পান করি

আমি আর আমার মনোরক্ষিতা।

 

সেই মহাজাগতিক সঙ্গম ছিন্ন হয়

কাকভোরে, মহাশূন্য বড় স্খলিত লাগে,

ধরাতলে কুসুমেরা শরীর শরীর করে না।

সম্ভোগ শিথিল হয়, তারপর চান্দ্রমাস-

দিনমান দিনক্ষয়, প্রতিদিন দিন কিনে বাঁচি।

 

আসমুদ্র অম্বরে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকি...

এক এক কলা

এক এক তিথিতে পুনর্বার পূর্ণ হয়ে

পূর্ণিমা হয়

 

হুলুধ্বনি ওঠে

কেউ শ্বেতচন্দনের টিপ দেয়

কেউ দেয় হরিচন্দন

সুগন্ধে ভাসে সোনার বাংলা

অনিকেত উলুখাগরা আমি

আলটপকা ঢুকে পড়ে

গা বাঁচিয়ে বাইরে আসি

সিংহফটকের সামনে

ভিখারি বালিকা

কপালে মাখিয়ে দেয়

গন্ধরহিত রক্তচন্দন

*********

শো’কজ

আমি তোমার মুখে থুতু ফেলেছি

বুঝতে পারনি

তুমি ভেবেছ চুমু

আমি বুঝতে দিইনি, নইলে

প্রাণ যেত

তোমার ছেলেদের হাতে

 

এমন কতই হয়

বিপ্লব কি এভাবেই ঘটে?

আমি যদি শিশুদের প্রথম পাঠে

‘সদা সত্য কথা বলিবে’র পাশে ‘না’ শব্দটা যোগ ক’রে দিই?

সেও কি বিপ্লব হবে?

 

তোমার যোনিতে যখন আমি প্রবিষ্ট হ’য়েছিলাম

মনে হ’য়েছিল

আপিসের বড়বাবু বুঝি শো’কজ করেছে

এখুনি উত্তর দিতে হবে

কি উত্তর, কি উত্তর, খুঁজতে খুঁজতেই

স্খলন হয়ে গেল

 

আমি একটুও তোমায় ভালবাসিনি

তাছাড়া, ভালবাসা শব্দটারই বা এত ভার কিসে?

সে কি মার্কিন ডলার না স্বর্ণমুদ্রা?

 

শিবঠাকুরের আফশোষ ছিল সেই দুর্লভ মুহূর্তে

পার্বতীর বক্ষমর্দন না করতে পারার

আমারও আফশোষ রয়ে গেল

সেই চরম অনুপলে

তোমার পেলব গলা টিপে, চুমু খেয়ে

হত্যা করতে না পারার

 

ইস্কুলের রাস্তায় হাঁটলে শুনতে পাই

সেই অজপা শিক্ষকের গলা

যিনি কলঙ্কিত-রোগে গত হয়েছেন অকালে

পরম ভালবাসায় বুঝি ডেকে বলেন,

‘প্রতিকূল পরিবেশে জন্তুরা কিভাবে শিকার

আহরণ করে, মন দিয়ে সেই পাঠ নে খোকা’

 

আমি সেই পাঠ নিচ্ছি স্যার

ক্রমাগত রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছি আর

তিনজন ডাক্তারবাবু মিলে

রোগমুক্তির বদলে

আমাকে আরো রোগগ্রস্ত করে তুলছেন

বই ছেড়ে বেড়িয়ে এসে আড় চোখে দেখছেন

ডাক্তার স্টকম্যা্‌ন আর বলছেন আমার পেশেন্ট, ইবসেন কোথায়?

হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটছি....

সুভাষ ডাক্তার ভূত হয়ে

চেপে বসছেন আমার ঘাড়ে;

আর বলছেন আত্মহত্যা মহাপুন্য

‘গণশত্রুর’ পর্দা ছিঁড়ে

বেরিয়ে আমার পিছনে ছুটছেন

ডাক্তার অশোক মুখার্জী;

বলছেন, আমি নাকি আর কোনদিন ঠাড় হব না

 

অথচ এই দেখুন, কেমন আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করছে

আমি গন্ধ পাচ্ছি সেই মানুষদের

যাদের জোড়া হেমিস্ফিয়ার

মাতৃ গর্ভে যাদের জন্ম নয়,

কোন রাজনৈতিক সচিবালয়ের সৌজন্যে

ইনকিউবেটরে লালিত সেই শিশুরা

 

সেই এক শিশু আমার কোলে চেপে বসে

আমাকে আঙুল দ্যাখায়

আমি হেঁটে চলি দিগভ্রান্তের মত

ডাঙ্গা ধরে ধরে।

*********

গর্ভ

লোকসমাজে

জীবনসাথী

অন্দরে সে

বারবণিতার প্রায়

ঠিক যেন সে

খেলার পুতুল

ব্যবহারের

বেড়ী পরে গলায়

সেই তো আমার

কাজের দিদি

যার গতরে

জীবনযাপন করি

সেই গতরেই

রাত্রিযাপন

ভূমধ্যমায়

অকাল বোধন করি

সে ভবানী

আপ্যায়নী

দরজা এঁটে

লজ্জা ছুঁড়ে ফেলে,

সেই তো এবার

গর্ভবতী

গর্ভে সে তার

বারুদ পুরে ধরে

***********