অনুপম, ২০২৩
Others/অন্যান্য
নববর্ষের নবরস
নন্দিনী সরকার
শৃঙ্গার হাস্য করুণ রৌদ্র বীর ভয়ানক বীভৎস অদ্ভুত ও শান্ত এই নবরসের নিরিখে নববর্ষ উঠেছে সেজে। জীবন যেমন
সবসময়ে একটা নির্দিষ্ট ছণ্দে চলে না, তার উত্থানপতন স্বাভাবিক। তেমনি ব্যক্তি অনুভূতি পরিবর্তনের সাথে চক্রাকারে আবর্তিত হয় বাংলার ঋতুচক্র।
"একে একে তার ছয়টি ধারা আসে যায় পিছে পিছে।
কেহবা শান্ত কেহ অশান্ত বদল ফুলে ও গাছে।
প্রকৃতির রূপ হেরিয়া তুমি জানিবেই পরিচয়।
যুগ যুগ ধরে চলিছে এ ধারা মানিবে তা নিশ্চয়।"
জীর্ণতার খোলস ত্যাগ করে নবীন সাজে এ বাংলা নববর্ষকে আহ্বান করে। নিষ্ঠুর ভৈরবের রূপে আগামীকে শক্ত হতে শেখায়।
বাস্তবে পনেরোই এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পালনে এখন বঙ্গবাসী অভ্যস্ত। চৈত্রের শেষ থেকে অতিরিক্ত দাবদাহে মানুষ সহ প্রতিটি প্রাণী হয় অস্থির। শুধু বিরুদ্ধ প্রকৃতি নয়, অসাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও যেন বাঁচতে শেখাচ্ছে বৈশাখ। পয়লা বৈশাখে নতুন বছরের উদ্দীপনা এখন সব বয়সের মানুষকে হয়তো সেভাবে স্পর্শ করে না। ইংরেজি প্রিয় বাঙালি এখন ধর্মে কর্মে পাশ্চাত্যপ্রেমী। তাই কবির কথায় ছোটোদের বাংলাটা এখন শেখাতে হবে ইংলিশে। তাই নবরসের নিরিখে তো নয়ই খুব বেশি ভাবলে ছোটো করে লক্ষ্মী গণেশ কিনে হালখাতার পুজো সারলেই নববর্ষ উদযাপন হয়ে যায়। আর কিছু কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতি প্রেমিক
( যারা আপামর মানুষের কাছে পাগল বলে পরিচিত) মানুষ 'এসো হে বৈশাখ' বলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যদিও 'এসো হে এসি এসো এসো ' বলে ডাকলে কাজে দেবে জেনেও এ এক অদ্ভুত আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। দীর্ঘদিন তা প্রায় গত পঞ্চাশ বছর ধরে বৃক্ষের আশ্রয় ছেড়ে আমরা নাগরিক পায়রার খোপে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি নিজেদের জ্ঞাতস্বারে। তাই বৈশাখের তাপমাত্রা উত্তরোত্তর বাড়ছে, বাড়বে। খবরের কাগজে তাপমাত্রার পরিমাপ দেখে আমরা আঁতকেও উঠব। আর গাছ কেটে জলাশয় বুজিয়ে বৈশাখের আহ্বান করে চলব। কপালের ঘাম মুছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলব "এই গরমে আর থাকা যায় না, এত গরম কিন্তু আগে হত না।"
আর টিভি চালিয়ে দেশ বিদেশের গরমাগরম যুদ্ধের জন্য কে কতটা দায়ী তাই নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুলব। তবু বলব
"এসো নতুন বছর
নববেশ ধরি
সূর্যকে পাই আরো আপনার করি।"