প্রথম বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা - বাঁচার অধিকার
Poems/কবিতা
গুচ্ছ কবিতা
মৌমন মিত্র
আত্মহত্যা
আত্মাকে হত্যা করা যায় তা জানে না মেয়েটা
হলদে রঙা ট্যাক্সির আঁচল উড়িয়ে
এখনো সে,
বন্দিশ ঝরাতে পারে, আসর গালিচায়।
দু'টি দেশ, দু'টি সময়, দু'টি দু'রকম বাঁশপাতা বাতাসে
দূরের জোৎস্না কাঁদলে এপারে ঘটি বাটি গেলাস ডুবে থাকে
গামছা গলায় ছিটকে-ছড়িয়ে
এ আত্মার ম্লানমুখী দেয়াল হয়? না-বাঁচার,না-থাকার?
একদিন কলেজ পাড়া থেকে ফিরতে ফিরতে
রাস্তায় দেখি দুর্ভাবনা থেকে উড়ে আসে দ্বিখন্ড সময়
মেয়েটা আ-আড়ষ্টদিন ঘাঁটে, আর ভাবে,
সময়কে কি কখনো একটা এক্সক্লুসিভ মরসুমের যত্ন দিয়েছি?
আরও কত গোলার্ধ সময় ব্যবধানের বিচ্ছেদ সংগ্রামে
মেয়েটা যার অন্য নামে,
এ-আসরে রক্তকরবী ফোঁটায় আয়ুর হাহাকাননে
এ-মরশূন্যতাকে ভরে দিল সে বাঁচার অহংকারে!
মেয়েটা বুঝতে পারে এরই মধ্যে তার পুনর্জন্ম
এবং পুনর্পুনর্জন্ম হয়ে গেছে
বাঁচার অহংকারে...।
অলস আঙুল
আজ দুপুরের রুক্ষ পাতা ছুঁয়েছে
বরফের আলতো চাদর
কোমলতা তার আদুরে আঙুলে মেশানো,
অলস আঙুল
এ-অলসতা ছুঁতে চায় বাউল পাখি মন
যখন যেমন চাই তা কি আর পাই !
তা যদি-বা পাই, কোনোভাবে পেয়ে যাই,
তাকে কী আর যত্নে রাখা জানি?
আশ কি জানে কীভাবে তার আশা মেটাই ?
তাকে কী আর নিয়মে বাঁধা যায়
তাই মনকে শাসাই, আর
নিয়ম মানার বাধ্যতায় ফের অলস আঙুল ছোঁয়ায়।
এভাবে পড়ে থাকা শুকনো পাতার সুগন্ধ ভাসে
বেলা পড়ে আসে, খুব ধীরে
আজ, হয়তো-বা ভীষণ ধীরে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে তার ছোঁয়াচ আয়াস দেবে ব'লে
ওহে ঘুমিয়ে পড়া মেঘলা দুপুর,
স্বপ্ন খুঁটে
কণ্ঠ শোনালে আঙুল বাড়ালে
এবার চন্দ্র-চাঁদের সমানুপাতিক আঙুল ছায়ায়
বরফ বেলা ক্রমশ দুঃখের জলকণা ঝাপসা করে দেয়...
শেষ ক'টা দিন
শেষ ক'টা দিন এভাবেই বাঁচতে চাই
তীব্র ক্ষুধায় জঙ্গলের মাঝে একা-একা
একক নীলকণ্ঠ সুধা বিষে
যে ক'টা দুঃখ ছিল তাদের সকলের জন্ম
হয়েছিল আজ।মোমের আলো ফুঁ দিয়ে,
কেকের বুকে ছুড়ি চালিয়ে
সেসব দুঃখের আর্তরব উদযাপন করি
নঞর্থক ভাষায়, বাগানময় তার
শব্দ শোনা যায়।
শেষ ক'টা দিন তার ফেলা যাওয়া কবিতা
কুড়িয়ে নিয়ে,আমি বারংবার চলেছি গুগল
ম্যাপের নির্দেশে, তবু ভুলিনি কিছু, জানো ?
ভুলিনি তুমি কেমন করে আমার যত্নকে ছুড়ে
ফেলে আমায় সহনশীল করেছ।ভুলিনি,তুমি
ক্রমাগত কীভাবে আঘাতের রেখা টেনে শূন্য
পুঁতে গেছ, যাকে আমি কবিতা জানাতে পারি
নিজেকে তছনছ করে... ভুলিনি কিছু,জানো ?
তাই শেষ ক'টা দিন এভাবেই বাঁচতে চাই
শেষ ক'টা দিন এমনই থাক
বিসর্জনে কড়ি-নক্ষত্রের নীচে, বেশ্যাভিমানে..