Society, Language and Culture
সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি

(A Multidisciplinary Peer-Reviewed Journal)
A Unit of Society, Language and Culture Trust
ISSN: 2583-0341

প্রথম বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা - বাঁচার অধিকার

Poems/কবিতা

গুচ্ছকবিতা

অলোক পুষ্পপুত্র


 

ইন্দ্রপ্রস্থ ২০২০
লোহিত লবণ উর্বর করে মাটি?
চলো ভাইয়ের কবরের ’পরে হাঁটি
যমুনা কিনারে শ্মশানে সাজাই চিতা
মসনদে নিরো যুধিষ্ঠিরের পিতা

রক্তবীজের গোড়ায় ঢালছে সার
আরও ঘৃণা আরও দ্বেষ হুংকার
মূর্খ স্বজাতি, বিবেকের বাণী কাঁদে!
নেশন আটক রিলিজিয়নের ফাঁদে

রিলিজিয়নের ধুয়ো তুলে মোমো বাসে
অন্ধভক্ত ফেটে পড়ে উল্লাসে...
মাটি ভিজে যায়
– অশ্রু, রক্তে  নুন
দু’হাতে লাড্ডু... খুন হয় ফাল্গুন!

স্কন্ধে জানাজা, মুখে রামনাম, হাঁটি
চিতার উপরে ছুড়ে কবরের মাটি!


অনুগ
“পিছনদিকে এগিয়ে যান!”একটানা কন্ডাকটার
দাঁড়াবার জায়গা পেলে আপনার কথা মনে পড়ে স্যার
“দাঁড়ালেই জীবনে স্ট্যান্ড করবি, গাধা, হাঁটলে চাঁদে!”
আপিসের তাড়া, বাস দেখে খোঁড়া, বাসে ‘ঘোড়া’ অপবাদে!

আপিস-ফেরত ক্লান্ত, চাঁদ দেখি উঠে যায়, হাঁটি
আমাকে টপকে যান সীতা সরেন বেশ পরিপাটি
হাওয়ার বিপরীতে, মুখে হাসি, টোটো-সওয়ার
বহু দূরে স্কুল, ম্যাডাম গেমস্‌ টিচার।

সবাই সামনে দেখে ম্যাম, আপনার পিছনে ফ্ল্যাটবাড়ি
মুচকি হাসবেন না প্লিজ, রাস্তায় পড়ে যেতে পারি!
“পড়লেই উঠবি, গাধা!” কত কথা বলতেন স্যার...

র‍্যাট রেসে পোডিয়াম, ক্লাসে বয় ব্যাক-বেঞ্চার!

ব্যাক রেসে জিততাম, স্যাক রেসে পরাজয় বাঁধা
জোর করে নামাতেন, “একদিন জিতে যাবি গাধা!”
পিছনে এগিয়ে গেলে খুশি হয় কন্ডাকটার
সীতা সরেনের আগে শিস দেয় ইকো ড্রাইভার!


নির্জ্ঞান
যে ফুলের মালা দিলেন শ্রদ্ধায় স্বরাজের পায়

ফুটিয়েছে কোন মালী, সাদা ফুল কোন বাগিচায়?
হয়ত-বা ম্লেচ্ছর, যবনের হাতে-গাঁথা মালা
রামলীলা ময়দানে কী শোভন আপনার গলা...
            
শ্মশানে সুষমা বিলীন, চাঁদ ওঠে যমুনায় বাঁকা
কালাচাঁদ দেখান রমজানে—অবন ঠাকুরের আঁকা
কৃষ্ণমঙ্গল, ভারতমাতা। তরুণ বিবেকের বাণী
তথাগত তাঁর লণ্ঠন, আচার্য সত্যসন্ধানী
             
গোমেধ অশ্বমেধ যজ্ঞ, মাংসভুক হিন্দুপুরাণ
গোবয় ভক্ষণে উদ্ধার, অনুশাসন পর্বে মহাজ্ঞান
হীন কাজ থেকে দূরে থাকা 
 হিন্দু্ত্ব! কাশ্মীর লাদাখ
এক নেশন এক নিশান—জনরবে খুন একলাখ!
          
কবরে ঝরে পড়ে জুঁই, নীচে নূর মালীটি ঘুমায়
এ দৃশ্য মহাভারতের, বৈষ্ণব থাকে পাহারায়!
অতন্দ্র জেগে থাকে সেনা, নজরে হজরতবাল
অমরনাথ দর্শন সেরে ডেকে দিন ভুক হরতাল।
                     
আপেলের টুকটুকে রং গিরিকন্যা বিবাহ হালাল...
শবদেহে রাখা সাদা ফুল শেষকৃত্যে হয়ে ওঠে লাল!


ঘটক
ফিঙেদের চড়ুইভাতি জমেছে ছাদনাতলায়
বাসরে রং তামাশা, বরের এক মাসতুতো ভাই
সিগারেট জ্বালতে এসে হারিয়ে ফেলে দেশলাই

কে দেবে আগুন তাকে, উঠোনে চড়ুইভাতি
ফিঙেরা পুচ্ছ তুলে খেলছে রান্নাবাটি
ছড়িয়ে হলুদ সিঁদুর ঘি দুধ কনের জ্ঞাতি...

বাসি-বিয়ে কাল সকালে পুরোহিত ঘুমিয়ে কাদা
বাসরে নাস্তি নিয়ম রঙ্গ মাঝেই দাদা
কনেকে মেসেজ লেখে, কোথা গেল পালের গোদা!

পাল এখন গড়ছে ঠাকুর— ষষ্ঠীর বাহন রাতে
ফিঙেদের চড়ুইভাতি রেখে খর নজরপাতে
থাবা তার করছে দৃঢ়— দূর ছাই দুধে-ভাতে...