Society, Language and Culture
সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি

(A Multidisciplinary Peer-Reviewed Journal)
A Unit of Society, Language and Culture Trust
ISSN: 2583-0341

প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা - সেপ্টেম্বর, ২০২০

Poems/কবিতা

(কবিতা গুচ্ছ)

সরিত ঘোষ


মনের ঘর

সরিত ঘোষ

দাও কি উঁকি মনের ঘরে, বারেক তোমার কাজের ভিড়ে,
আপনি নিরখিয়া;
চতুর্পাশের কর্মস্রোতে, সিক্ত তুমি রিক্ততাতে,
ক্লান্ত তব হিয়া।

ব্যস্ত যেগো বাঁচার তরে, নিত্য খিদে গুমরে ধরে,
তার দাপে ঝাঁপ দাও -
দেহ বিনেও মন যে আছে, খোঁজ কি নিলে তাহার কাছে, “বলো না কি চাও”?

জগৎমাঝে কর্মরত,জীব-জড় নয় কেউ অক্ষত,
বিবর্তনের সুর -
কেউ বোঝে কেউ বোঝে না রে, মনের দুয়ার কড়া নাড়ে,
রয় না নিকট দূর।

মনের তরে একটু ভাবো, খিদে তারও অভিনব,
মেটাও মনের খেদ -
রিক্ততা তা করলে পূরণ, তৃপ্তি লভে দেহ ও মন,
সুখের ঝরে স্বেদ।

বাঁচে না কেউ মন ছাড়া, মন তো চপল বাঁধহারা,
চলে বিপুল বেগে -
সেই সুরে গাও আনন্দে, জীবন ভরো সুছন্দে,
কাটাও নিরুদ্বেগে।

পান্থনিবাস

সরিত ঘোষ

বিপুলের মাঝে আমি কণা ক্ষুদ্রতর,
আপন অস্তিত্ব মোহে কামনা জর্জর।
লোভ, কাম, ভোগসম যত রূপ তৃষা,
ত্যাজিতে পারিনে সদা, মনে রয় আশা।
যতটুকু পেনু, তারও বেশি প্রত্যাশা,
নিতি নিতি অধোগামী, কূহকী পিয়াসা।
চারিপাশে হেরি দ্রুত, প্রাপ্তির তরে,
চিত্ত ধাইছে মিছে, বাঁধন নিগড়ে।
অধোগামী হই তবু, মুক্তি না চাই,
জীর্ণ-জরা কায়ে-ছায়ে, ক্রমশঃ হাঁপাই।
তবু,ফিরিনা নিজে, ভ্রম-মোহ ত্যাজি -
কূল সমীপেও কেন, চিত্তভ্রম আজি।

এত খুশি, এত রূপে, সজ্জিত এ ধরা,
স্রোত বহে অবিরাম, ফণী বেণীহারা।
শ্যামলিত তরুদল, ভরা ফুলে-ফলে,
সুনীল জলধি পরে, অমৃত বিলালে।
নির্মল যে সমীরণ, আবেশে জড়ায়,
গিরি হতে তটিনী, সাগরে মিলায়।
হিমানীর সঞ্চয়েতে, শ্বেতকায় রূপে,
সুধা পূর্ণ হয়ে মাতা, আছে গো নিশ্চুপে।
জঠর নিভৃত হতে, সঞ্চিত রতনে,
সেবিছে সৃষ্টিরে নিজ, স্নেহে ও যতনে।
সকলি বিলায়ে বিধি, সৃজনের আশে,
রয়েছে অনন্তে বাঁধি, হৃদে ভালোবেসে।

আমি হে ক্ষুদ্র তনু, কতটুকু পারি,
জাগে কি চেতন মম, অচেতনা ছাড়ি।
স্বল্প সাধ্যে, হৃদয়ের মুক্ত অভিলাষে -
রত হই সৃজনের সুখ পরবাসে।
সকলের সনে মিলি, সকলের তরে,
মিলাই চেতন নিজ, সবাকার ঘরে।
ভাগ করে লই যদি, সব সুখ-দুখ,
পুর্ণ হয় ধরিত্রীর, ব্যথাদীর্ণ বুক।
আমিও তো পূর্ণ যদি, অপরের দানে,
ফিরাই গো দায় নিজ, জীবন আহ্বানে।
সকলে যদিগো হই, সকলের শ্বাস,
ধন্য হবে - ক্ষণিকের পান্থনিবাস।

পথ-চলতি

সরিত ঘোষ

পথ যে হাঁটছি একটানা বহুদিন,
জানিনে সামনে, কতখানি হাঁটবো,
পথের পাশের, চেনা-অচেনারে জানা,
ফসল হয়েই, কতখানি ঝরবো।

প্রভাতে যখন, কুঁড়ি হয়ে ফুটেছিনু,
অশক্ত কায়ে,গড়ে নিতে অক্ষম -
মাতা-পিতা সনে, যেইটুকু শিখেছিনু,
তাইতে ছুটছি, নিয়ে বুক ভরা দম।

শৈশব গেলো, কৈশোর চিনে নিতে,
চারপাশে-মিঠে যৌবন মৌতাতে -
পারিনি কিছুই কি উজাড় করে দিতে,
পরার্থ তরে, আপনা বিলায়ে নিতে!

গৃহেরও বাইরে গৃহ সে বৃহত্তর,
সেখানে নজর দিয়েছি সামান্যই -
শপথ তো ছিল গড়বো মহত্তর,
পারিনি মোহের, লোভে সে আবর্তই।

ছু্ঁয়েছি মহত,পবিত্রতার আলো,
টুটাতে চেয়েছি, আঁধার-ক্লিষ্ট রাত -
পথেই রয়েছি, ভাঙতে চাইছি কালো,
স্বপ্নে এখনও, নবীন রাঙা প্রভাত।