Society, Language and Culture
সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি

(A Multidisciplinary Peer-Reviewed Journal)
A Unit of Society, Language and Culture Trust
ISSN: 2583-0341

প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা - সেপ্টেম্বর, ২০২০

Poems/কবিতা

অন্য অমলকান্তি

লোপামুদ্রা রায়চৌধুরী


অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল;
অবশ্য সব অমলকান্তিই যে রোদ্দুর হতে চায় এমনটা নয়
কেউ মেঘ হতে চায়,
একটা পিচ ঝলসানো দুপুরের পর
যে মেঘটি খুব বৃষ্টির আশ্বাস,
কেউ পাখি হতে চায়
উড়াল ছন্দে ভেসে চলে যায়
হপ্তা - বছর - মাস -
কেউ আবার নদীও নয়,
শুধু তার ছলাৎ ঢেউ হতে চায়।

কবির অমলকান্তি নাকি রোদ্দুর হতে পারেনি,
কারণ সে একটা অন্ধকার ছাপাখানায় কাজ করতো
সত্যিই পারেনি?
অন্ধকার ঘুপচি একটা ঘরে কাজ করলে বুঝি
রোদ্দুর হওয়া যায় না?
আর ওই যে অতো বই তার চারদিকে
কতো কতো নিষ্প্রাণ শব্দ আর অক্ষর -
অমলকান্তি ছুঁলেই যারা প্রজাপতি হয়ে যায়
ওতে বুঝি তার মনের ঘরে রোদ-সুখ জমতো না?

যে পাখি হতে চায় -
সে চায় কোন পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই
কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে,
“দুয়ো দুয়ো ধরতে পারলে” আ-এ-না-এ
বলে, সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে যাবে
কিন্তু বড় হয়ে সে যদি একটা
লেদ মেশিনের কারখানায় কাজ পায়
লজঝড়ে একটা সাইকেল ছাড়া
অন্য কিছুতে চড়ার সাধ্যই হবে না যার,
সে কি তবে ডানা মেলতে পারবে না?

বা, ধরো ঢেউ
পুরোপুরি নদীও তো হতে চায়নি বেচারি!
শ্যাওলা ধরা চৌবাচ্চার মাত্র তিন মগ জল
রোজ যার স্নানের জন্য বরাদ্দ,
সে কি তবে অন্যকে ভেজাতে পারবে না?

আসলে
মেঘ যেভাবে শ্রাবণ হয়ে যায়
পাখি যেভাবে জিদ
আর ঢেউ যেভাবে ভাঙন
অমলকান্তিও সেভাবেই রোদ্দুর হতে পেরেছিল।
নিজস্ব শর্তটুকু সে ঠিক জমিয়ে রেখেছিল
আলগা বোতাম বুক পকেটে।

অমলকান্তিদের স্বপ্নে কোন ভিকট্রি স্ট্যান্ড নেই,
চুনের দাগ কাটা লেন নেই
তাই বেপরোয়া কিছু সিলেবাস সঙ্গে নিয়ে
ওরা নিরুচ্চার - এলোমেলো হাঁটে
হাঁটতে হাঁটতে
হাঁটতে হাঁটতে
কখন যেন টুক করে উঠোনময় রোদ্দুর হয়ে যায়।

আমরা
যারা বড় হয়ে কেউ মাস্টার হয়েছি
কেউ ডাক্তার
কেউ উকিল
আমরা সবাই আসলে মনে মনে
অমলকান্তি হতে চেয়েছিলাম
পারিনি!
তাই আঙুরখেতের বোকা শেয়ালটার মতো
ঘ্যানঘ্যানে সুরে বলতেই থাকি
“অমলকান্তি না রোদ্দুর হতে পারেনি
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি -

আসলে
আমরা কেউই
অমলকান্তি হতে পারিনি -