প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা - আগস্ট, ২০২০
Poems/কবিতা
এ কালের নিরুপমা
দেবলীনা গুহ ঠাকুরতা
দেনাপাওনার হাটে-বাজারে বাবার সিন্দুক ফাঁকা,
ছেলে কিন্তু সোনার আংটি, হয় কি সে বাঁকা!
সেদিনের সেই নিরুপমা, আজকে হল পমি,
মা-বাবার এক মেয়ে - হীরের চেয়েও দামি।
অতি আদরে মানুষ পমি, যেন খাঁটি সোনা,
বাবা-মায়ের নয়নের মণি,এটা সবার জানা -
এমনি ভালোবাসায় মোড়া পমি এখন বড়,
পাঁচ বছর আগে তার বয়স ছিল আঠারো।
বাবার ঘরে আদর পাবার দিন প্রায় শেষ,
পমির কিন্তু মন এখনও উড়ুউড়ু বেশ।
শিক্ষিত এই ছেলেরা সব বিয়ের কথা হলে
মায়ের আঁচলের নিচে মুখ লুকিয়ে চলে।
কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার নেই তো কোনও অভাব,
বিশ্বায়নের যুগেও মানুষের বদলায়নিকো স্বভাব।
ছেলের বাড়ি বড় ভালো, ত্রুটিহীন আপ্যায়ন,
মায়ের বুক শূন্য যেন, জলে ভরে দু’নয়ন।
‘‘কোনও কিছুর নেই চাহিদা’’, বলে তারা মুখে,
‘‘বউ তো মেয়েই হল, থাকবে সুখে-দুখে’’।
পমি সুখী, সবাই সুখী, সুখের ঘড়া পূর্ণ,
কে জানত, এক বছরেই হবে যে সব চূর্ণ!
বিয়ের পরেই হল আবদার - ফ্রিজ, টিভি, গাড়ি;
‘‘মেয়ে দিয়েছেন খালি হাতে’’ - অভিযোগ বেশ ভারী।
খাট-পালঙ্কয় মনে ভরে না, চাওয়ার নেই অন্ত;
আইনের ভয়ে কুটুমবাড়ির মুখ ছিল বন্ধ।
মেয়ের কথা ভেবে বাবা আনল টিভি, ফ্রিজ;
স্ট্যাটাস রক্ষা করবে ছেলে, রাখবে দামি চিজ।
এতেও তো মন ভরে না, এবার চাই গাড়ি;
অল্টো কিংবা স্যান্ট্রো - নাম ভারী ভারী;
তবুও বাবা জামাইকে দিল গাড়ি উপহার,
খুশি হয়ে ছেলে পমিকে দিল সোনার হার।
পমি কিন্তু নেই আর ছোট, বড় হয়েছে সে;
চুপটি করে দেখল সবই,বলল কাছে এসে -
‘‘বাবা, তুমি সারাজীবন যে নীতিতে চললে,
আজকে বুঝি মেয়ের জন্য সব মুছে ফেললে!’’
গাড়ি, ফ্রিজ, টিভি, গয়না - এসব বিলাসিতা;
চাইনি আমি এসব কিছুই, চেয়েছি বন্ধুতা।
স্বামী হবে বন্ধু আমার, থাকব মিলে-মিশে,
ভাবিনি এর মাশুল বাবাকে দিতে হবে শেষে।
ফিরিয়ে নাও এ সবকিছু, এতে নেই তো সুখ;
প্রশ্রয় দিয়ে বাড়িও না সমাজের এ অসুখ।
রবি ঠাকুরের নিরুপমাও এই কথা বলে
স্বর্গলোকে পাড়ি দেয় সবাইকে ফেলে।
পমি কিন্তু আজকের মেয়ে, নয়কো সে বোকা;
‘‘লেখাপড়া জানা আমি, থাকব একা-একা।
আইনি মতে আমরা দু’জন স্বামী-স্ত্রী বটে,
তবে আমি ছাড়লাম শোনো তোমার এই ভিটে।’’
বাবার বাড়ি গেলে এ সমাজ করবে নিন্দে,
এটা এই সমাজের রোগ, আছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
বাবা কিন্তু অবাক, চেয়ে থাকে পমির পানে;
কবে যে মেয়ে বড় হল, আজ বুঝি সে জানে।
শোনো, বন্ধু, শোনো প্রাণহীন কিছু মানুষের ইতিকথা,
একই রক্ত-মাংসে গড়া নারীর মর্মব্যথা।